Thursday, September 3, 2020

ইকোনোমাইজার (Economizer)

ইকোনোমাইজার (Economizer)

বয়লারের ফিড ওয়াটরকে গরম করার জন্য ইকোনোমাইজার ব্যবহার করা হয়। ইকোনোমাইজারও এক ধরনের হিট এক্সচেঞ্জার। অনেকগুলো টিউবের সমন্বয়ে ইকোনোমাইজার গঠিত। গরম বাতাস  চিমনী দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে এটি স্থাপন করা হয়। নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে ইকোনোমাইজার বয়লারের ইকোনোমি উন্নত করে। প্রায় সকল ধরনের বয়লারেই ইকোনোমাইজার ব্যবহার করা হয়। ইকোনোমাইজার এর টিউবের ভিতরে থাকে পানি এবং বাইরে থাকে গরম বাতাস । 



প্রায় সকল ধরনের বয়লারেই ইকোনোমাইজার ব্যবহার করা হয়।

এয়ার প্রিহিটার

 এয়ার প্রিহিটার

এয়ার প্রিহিটার হচ্ছে এক ধরনের হিট এক্সচেঞ্জার। এক্জস্ট ফ্লু গ্যাস  হতে তাপ উদ্ধার  করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। বয়লার চিমনী এবং বয়লার ইকোনোমাইজারের মধ্যবর্তীস্থানে এয়ার প্রিহিটার স্থাপন করা হয়। এয়ার প্রিহিটার এর মধ্যে exhaust flue gases   হতে combustion air  তাপ গ্রহন করে যার ফলে কোন কোন বয়লারে এয়ার প্রিহিটার ব্যবহারে ৫%-১০% পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় হয়।


সকল বয়লারে এয়ার প্রিহিটার ব্যবহার হয়না, বিশেষ করে স্মল ইন্ডাষ্ট্রিয়াল বয়লার ও প্যাকেজটাইপ বয়লারে এয়ার প্রিহিটার খুব কমই ব্যবহার করা হয়। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লার ও বিভিন্ন প্রসেস ইন্ডাষ্ট্রিতে এয়ার প্রিহিটার ব্যবহার হয়।

বয়লার মাউন্টিংস

বয়লার মাউন্টিংস

বয়লার মাউন্টিংস হচ্ছে বয়লারের আবশ্যকীয় কিছু ডিভাইস যা বয়লার  সঠিক ও নিরাপদভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

বয়লারে ব্যবহৃত বিভিন্ন মাউন্টিংস

 ১) সেফটি ভালভ

২) প্রেসার গেজ

৩) ওয়াটার লেভেল ইন্ডিকেটর

৪) স্টিম স্টপ ভালভ

৫) ব্লো-অফ কক

৬) ফিড চেক ভালভ

৭) ফিউজিবল প্লাগ

 

 

বয়লার এক্সেসরীজ

বয়লারের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যেসকল ডিভাইস ব্যবহার করাহয় সেগুলেই  বয়লার এক্সেসরিজ নামে পরিচিত।

 

যেমন-


১. ফিড পাম্প
২. সুপার হিটার
৩. ইকোনোমাইজার
৪. এয়ার প্রতি হিটার

বয়লার এক্সেসরিজ সাধারনত হিট লস কমিয়ে বয়লারের দক্ষতা বৃদ্ধি করে . সুপার হিটার, ইকোনোমাইজার
ও এয়ার প্রতি হিটার ফ্লু গ্যাসের নির্গমন পথে বসানো হয়।

 

এয়ার কক (Air Cock)

 বয়লার চালুর সময় বাষ্প উৎপন্ন নিশ্চিত হওয়ার জন্য এবং হাইড্রোলিক টেষ্টের সময় বয়লার সম্পুর্ণ পানি দ্বারা ভর্তি হয়েছে কিনা তা বুঝার জন্য বয়লারের উপরে এয়ার কক স্থাপন বা সংযোজন করা হয়।


এয়ার কক এর মাধ্যমে বয়লার চালু করার সময় বয়লারে অভ্যন্তরের বাতাস বের করে দেয়া হয় এবং বাষ্প উৎপন্ন শুরু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়। বাতাস বের না করা হলে বয়লারের অভ্যন্তরে বাষ্পের চাপ ও বাতাসের চাপের কারনে প্রেসার গেজে অসংগতিপূর্ণ মান (রিডিং) প্রদান করতে পারে। 


বয়লারে হাইড্রোলিক টেষ্টের সময় বয়লার পানি দ্বারা পরিপূর্ণ করতে হয়। বয়লারে পানি দ্বারা পরিপূর্ণ করার সময় বয়লারের অভ্যন্তরের বাতাস বাইরে বের করে দেয়ার জন্য এয়ার কক ব্যবহার করা হয় এবং পানি দ্বারা পরিপূর্ণ ভর্তি হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এয়ার কক এর প্রয়োজন হয়।


ব্লো-ডাউন ভালব (blow Down Valve)

 ব্লোডাউন ভাল্ভ ব্যবহারের মাধ্যমে বয়লার এর ড্রামের নিচে জমাকৃত তলানি বের করা হয়।


 

বয়লারের অভ্যন্তরের পানির বিভিন্ন প্যারামিটার নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য ব্লোডাউন ভাল্ব এর মাধ্যমে নিয়মিত ব্লো-ডাউন করতে হয়, অন্যথায় বয়লারের টিউব ও প্লেটে স্কেল জমে বয়লারে তাপ সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে। বয়লারে স্কেল জমলে বাষ্প উৎপাদন কমে যাবে জ্বালানী ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং প্লেট, টিউব ইত্যাদি ক্ষয় হয়ে বয়লারের আযুষ্কাল কমে যাবে।

বিশেষ করে স্কেল হ্রাস করা, কোরোশন কমানো, ক্যারিওভার না হওয়ার জন্য নিয়মিত বয়লার নির্মাতার নির্দেশনা মোতাবেক অথবা বয়লার ওয়াটার পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ব্লো-ডাউন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়াও বয়লার ওয়াটারের পিএইচ বেড়ে গেলে ব্লো-ডাউন করে পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

বয়লার দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়

 বয়লার দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়

ক) সাধারণ করণীয়ঃ

১। বয়লার চালনার পূর্বে প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় হতে অবশ্যই নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে;

২। বাৎসরিক পরিদর্শনপূর্বক বয়লার চালনার সনদ নবায়ন করতে হবে;

৩। বয়লার সনদে উল্লেখিত নির্ধারিত চাপের মধ্যে সেফটি ভাল্ভ সেট বা বয়লার চালনা করতে হবে;

৪। উপযুক্ত সনদপত্রধারী (বয়লার পরিচারক) এর তত্ত্বাবধানে বয়লার চালনা করতে হবে;

৫। বয়লার এর কোন প্রেসার পার্টস এর কাঠামোগত পরিবর্তন বা সংযোজন এর ক্ষেত্রে প্রধান বয়লার পরিদর্শকের পুর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।


খ) কারিগরি বিষয়সমূহঃ

১। বয়লারে কমপক্ষে ০২(দুই) টি সেফটি ভালব ব্যবহারসহ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে;

২। দুইটি ফিড পাম্প ব্যবহারসহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু বা বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে;

৩। বিধি অনুযায়ী প্রেসার গেজ ব্যবহারসহ নিয়মিত ক্যালিব্রেশন করতে হবে;

৪। বয়লারে অবশ্যই পরিশোধিত পানি ব্যবহার করতে হবে;

৫। বয়লার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও তথ্য লগশীটে লিপিবদ্ধ করতে হবে।


গ) রক্ষণাবেক্ষনের জন্য  করণীয়ঃ

    বয়লার নিম্নেক্ত পদ্ধতিতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবেঃ

প্রতিদিনের করণীয়ঃ পরিশোধিত পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, গেজ গ্লাস পরীক্ষণ, ব্লো-ডাউন নিশ্চিতকরণ ও লগবুকে তথ্য লিপিবদ্ধকরণ।

সাপ্তাহিক করণীয়ঃ ওয়াটার লেভেল কন্ট্রোলার পরীক্ষণ, ব্লোয়ার, আইডি ফ্যান, এফডি ফ্যান পরীক্ষণ, প্রেসার গেজ, প্রেসার সুইচ ও ফটোসেল পরীক্ষণ।

মাসিক করণীয়ঃ ফিড পাম্প, সেফটি ভালব, প্রেসার লিমিট সুইচ এবং ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোলসমূহ পরীক্ষণ।

বার্ষিক করণীয়ঃ সকল গ্যাসকেট ও ভালবসমূহ পরীক্ষণ বা পরিবর্তন এবং বয়লার ডি-স্কেলিং ও ক্লিনিং করে জলীয় পরীক্ষা নিশ্চিতকরণ।


বয়লার দুর্ঘটনার ঝুঁকি বা কারণসমূহ (Causes of Boiler Accident)

 ক) নির্ধারিত চাপের অধিক চাপে সেফটি ভালব সেটিং বা বয়লার চালানোঃ

বয়লার দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হচ্ছে বয়লার সনদে উল্লেখিত নির্ধারিত চাপের অধিক চাপে বয়লার চালনা করা। বয়লারে সেফটি ভালব ব্যবহার এর মাধ্যমে নির্ধারিত চাপে বয়লার চালনা নিশ্চিত করা হয়। বয়লার এর সেফটি ভালব কোন কারণে লক বা বন্ধ হয়ে গেলে বা কোনভাবে টেম্পারিং করা হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সেফটি ভালব নির্ধারিত চাপে সেট করতে হবে এবং নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।


খ) বয়লারে পানির লেভেল কমে যাওয়াঃ

বয়লার চালু অবস্থায় কোন কারণে পানির লেভেল নির্ধারিত লেভেলের চেয়ে কমে গেলে বয়লার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফিড পাম্প সঠিক সময়ে চালু না হলে পানির লেভেল নিচে নেমে যাবে ও বয়লারের অভ্যন্তরীণ টিউব, ড্রাম বা শেল বালজিং (ইঁষমরহম) হয়ে বয়লার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রত্যেকটি বয়লারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিড পাম্প চালু ও বন্ধের ব্যবস্থা রাখতে হবে।


গ) প্রেসার গেজ এ ভুল রিডিংঃ

বয়লারে ব্যবহৃত প্রেসার গেজ এর অসংগতিপূর্ণ মান বা সঠিক রিডিং না হলে বয়লারের বাষ্প চাপ বৃদ্ধি পেয়ে বয়লার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বিধি মোতাবেক যথাযথ প্রেসার গেজ ব্যবহার এবং সময়ে সময়ে প্রেসার গেজ ক্যালিব্রেশন নিশ্চিত করতে হবে।


ঘ) উপযুক্ত সনদপত্রধারী (বয়লার পরিচারক) ব্যক্তি ব্যতীত বয়লার চালানোঃ

বয়লার পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সনদপত্রধারী বা দক্ষ ব্যক্তির তত্ত্বাবধান  ছাড়া বয়লার চালালে বয়লার দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।


ঙ) মানসম্মত গ্যাসকেট ব্যবহার না করাঃ 

বয়লার ও স্টিম পাইপ এর বিভিন্ন জয়েন্টে সঠিক মানের গ্যাসকেট ব্যবহার না করলে স্টিম লিকেজ হয়ে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।


চ) পরিশোধিত পানি ব্যবহার না করাঃ

কোন বয়লারে পরিশোধিত পানি ব্যবহার না করা হলে বয়লারের টিউব, প্লেট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বয়লারে পরিশোধিত পানি ব্যবহার না করলে হার্ডনেস বৃদ্ধি পেয়ে প্রেসার পার্টস এ স্কেল জমে দক্ষতা হ্রাস পায় এবং  বয়লার দুর্ঘটনার ঝুুঁকি তৈরি হয়।


ছ) যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করাঃ

বয়লার নিরাপদভাবে চালনার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া দীর্ঘদিন একটানা বয়লার চালালে বয়লার দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বয়লার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে পরবর্তীতে চালু করার সময় বয়লার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।


লগশীট (Log Sheet)

বয়লার চালনার বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য লগশীট ব্যবহার করা হয়। বয়লার লগশীটে প্রতিদিনের তথ্য ঘন্টায় ঘন্টায় লিপিবদ্ধ করতে হয়। বয়লারের স্টীম উৎপাদন কমে গেলে বা ফ্লু গ্যাসের তাপমাত্র বেড়ে গেলে তার কারন লগবুকের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়। তাছাড়া বয়লার ক্লিনিং বা মেরামতের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে লগবুকের তথ্য সহায়ক ভ’মিকা পালন করে। 

বয়লার পরিচালনার ও চালু অবস্থায় বয়লারের বিভিন্ন তথ্য  লগশীটে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

তারিখ

সময়

বাষ্পচাপ

বাষ্পের তাপমাত্রা

ফ্লু গ্যাসের তাপমাত্রা

ব্লোডাউন সময়

গেজ গ্লাস ক্লিনিং সময়

পরিচারকের নাম


পরিচারকের স্বাক্ষর              কর্মকর্তার স্বাক্ষর


বয়লারের কার্যক্ষমতা ও আয়ুষ্কাল বয়লারে ব্যবহৃত পানির সাথে সম্পর্কিত। তাই বয়লারের পানির গুনাগুন সঠিক রাখার জন্য নিয়মিত বয়লারে ব্যবহৃত পানির পরীক্ষা করে তথ্য সংগ্রহ করা জরুরী। 
বয়লারে ব্যবহৃত পানির মানমাত্রার তথ্য  নি¤œ বর্ণিতভাবে লগশীটে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
 
তারিখ  
সময় 
ফিড ওয়াটার -পিএইচ (pH), হার্ডনেস (Hardness) টিডিএস(TDS) 
 
বয়লার ওয়াটার-পিএইচ (pH) টিডিএস (TDS)
 
সফটনার রিজেনারেশনের সময়


পরীক্ষাকারীর স্বাক্ষর কর্মকর্তার স্বাক্ষর

এছাড়াও বয়লার ও বয়লারে ব্যবহৃত পানির  বিভিন্ন তথ্য ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হবে।


বয়লারে ব্যবহৃত পানির গুনগত মান (Boiler Water Qulity)

বয়লারের কার্যক্ষমতা ও আয়ুষ্কাল বয়লারে ব্যবহৃত পানির বিভিন্ন মান মাত্রার (প্যারামিটার) উপর নির্ভর করে। বয়লারে পরিশোধিত পানি ব্যবহার না করলে বয়লারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। দীর্ঘদিন পরিশোধিত পানি ব্যবহার না করলে বয়লারের প্রেশার পার্টস ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বয়লারে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। বয়লার নির্মাতার নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের বয়লারে পানির প্যারামিটার ভিন্ন হয়ে থাকে। স্বল্প ও মধ্যম কার্যকরী চাপের বয়লারে পানির প্যারামিটারসমূহ নিম্নরূপঃ 


ফিড ওয়াটার

১. পিএইচ (pH) : ৭-৯

২. হার্ডনেস : ০-৫ পিপিএম

৩. টিডিএস : সর্বোচ্চ ২৫০ পিপিএম


বয়লার ওয়াটার

১. পিএইচ (pH) : ৯-১১

২. টিডিএস (০-৩০০ পিএসআই বয়লারের জন্য): ৩৫০০ পিপিএম

 

Welding Procedure Specification (WPS) বা ওয়েল্ডিং পদ্ধতি নির্ধারণপত্র

  Welding Procedure Specification (WPS) বা ওয়েল্ডিং পদ্ধতি নির্ধারণপত্র হলো একটি লিখিত দলিল, যা কোনো নির্দিষ্ট ধাতব উপকরণ জোড়ার কাজ (wel...